করোনা রোধে নতুন নোট ছাড়ার উদ্যোগ
মহামারী করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বাজার থেকে পুরনো টাকা তুলে ৩০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রাথমিকভাবে ২৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছেড়ে বাজার থেকে পুরনো টাকা তুলে নেয়া হবে। এর পরও নগদ টাকার প্রয়োজন হলে আরো ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছাড়ার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাজার থেকে ব্যবহূত পুরনো নোটগুলো তুলে নেয়া দরকার।
সবদিক বিবেচনা করেই নতুন নোট ছাপানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও এবারের ঈদুল ফিতরে নতুন টাকার চাহিদা কম থাকবে।
সূত্র জানায়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রুখতে ৬০ হাজার কোটি ইউয়ান মূল্যমানের কাগুজে নোট পুড়িয়ে ফেলেছিল চীন। পৃথিবীর অনেক দেশই চীনের পথ অনুসরণ করেছে।
বাজারে নতুন নোট ছেড়ে ব্যবহূত নোট তুলে নিচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। এবার বাংলাদেশ ব্যাংকও এ তালিকায় যুক্ত হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, দেশে টাকা ছাপানো ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।
বিভাগটির তথ্যমতে, আগে থেকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ১ হাজার টাকার বিপুল পরিমাণ নোট মজুদ ছিল। ফলে নতুন করে ১ হাজার টাকার নোট ছাপানো হচ্ছে না।
এবার সবচেয়ে বেশি ছাপানো হবে ৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ২০ ও ১০ টাকার নোট। এর মধ্যে ৫০০ টাকার নোট ছাপানো হচ্ছে ৩৭ কোটি। এ হিসাবে সাড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের ৫০০ টাকার নোট ছাপানো হবে।
মুজিব বর্ষ উপলক্ষে চালু করা ২০০ টাকার নোট ছাপানো হচ্ছে ২০ কোটি। এছাড়া ৩৫ কোটি নোট ছাপানো হচ্ছে ১০০ টাকার। তবে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি ছাপানো হচ্ছে ৫০, ২০ ও ১০ টাকার নোট।
ব্যাংকাররা বলেন, করোনা কাগুজে নোটের মাধ্যমে গণহারে ছড়ানোর বিষয়টি প্রমাণিত নয়। তার পরও সতর্কতা হিসেবে বিশ্বের অনেক দেশই বাজার থেকে পুরনো নোট তুলে নিয়ে নতুন নোট ছাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই পথে হাটছে। এটা ভালো উদ্যোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা মূল্যের কাগুজে নোট প্রচলিত রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে কাগুজে নোটের চাহিদা ১ লাখ ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকায় সীমাবদ্ধ থাকে।
তবে করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই নগদ টাকা তুলতে ব্যাংকে বাড়তে থাকে গ্রাহকদের ভিড়।
মার্চ থেকে গ্রাহকদের এ ভিড় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। বিপরীতে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়ার প্রবণতা কমেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ব্যাংকগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী নগদ টাকা সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও।
করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট বিপর্যয় থেকে উত্তরণে কৃষক, ছোট-বড় শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার।
স্বল্প সুদে ঋণ হিসেবে এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৮ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে। সে হিসাবে অর্থনীতিতে এই ৩৮ হাজার কোটি টাকা নতুন করে যুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ডিমান্ড-সাপ্লাই নীতি অনুসরণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সারা বছরই বাজারে নোট সরবরাহ করে। প্রতি ঈদের আগেই বাজারে নতুন টাকা ছাড়া হয়।
তবে এবারের ঈদের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। করোনা ভাইরাসে সৃষ্ট দুর্যোগ ও অন্য সবদিক পর্যালোচনা করেই বাজারে নতুন নোট ছাড়া হবে।
তিনি বলেন, গত ঈদেও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার নতুন নোট ছেড়েছিল। এবার এর পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।